শাস্ত্রমতে, যৌনপল্লীর মাটি ছাড়া দুর্গাপুজো সম্পন্ন হয় না । দীর্ঘকাল ধরে সেই রীতি চলে আসছে আজও । যুগ বদলেছে, আধুনিক সমাজ গড়ে উঠেছে । কিন্তু, আজও আধুনিক সমাজ যৌনপল্লীর মানুষগুলোকে ব্রাত্যই করে রেখেছে । পুজোয় তাঁদের দুয়ারের মাটি ব্যবহার করা হলেও, তাঁদের উপস্থিতি কিন্তু বাঁকা চোখেই দেখেন অনেকে । কিন্তু আর পাঁচজনের মতো, পুজো তো তাঁদেরও । সেকথা ভুলে যান অনেকেই । তাই, নিজেদের জন্য নিজেরাই লড়াই করছেন যৌনকর্মীরা । গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছেন তাঁরা । মাঝে বাধা এসেছে অনেক । কিন্তু, লড়াই করে গিয়েছেন । আর দেখতে দেখতে এবার তাঁদের পুজো ১২ বছরে পদার্পণ করল ।
২০১৩ সালে পুজো শুরু । প্রতিবছর পুজোর আয়োজন করে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি । এবারও তার অন্যথা হয়নি । চলতি বছর সোনাগাছির পুজোর থিম 'এক দশক বা এক যুগ'। কারণ, ১২ বছরে পড়েছে তাঁদের পুজো । সেকথা মাথায় রেখেই সেজে উঠেছে সোনাগাছির মণ্ডপ । একচালার দুর্গা প্রতিমা এসে গিয়েছে মণ্ডপে । চতুর্থীর সন্ধ্যায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের উদ্বোধন হল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমার আবরণ উন্মোচন করেন সংগঠনের সভাপতি তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র । উদ্বোধনের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল ।
মদন মিত্র জানান, প্রত্যেক বছর তিনি এখানে আসেন । তাঁর মতে, এই পেশার সঙ্গে যুক্ত সকলেই দেবী দুর্গার রূপ । কামারহাটির বিধায়কের কথায়, যৌনকর্মীদের কোনও স্বাধিকার নেই । তাঁদের দাবি একটাই, তাঁদেরও যেন লাইসেন্স দেওয়া হয়, যাতে সম্মানের সঙ্গে তাঁরা কাজ করতে পারেন । দেবী দুর্গার কাছে মদন মিত্রের একটাই প্রার্থনা, যৌনকর্মীরা যেন তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন ।
দুর্বারের সচিব বিশাখা লস্কর বলেন, 'পুজো ১২ বছর পূর্ণ হচ্ছে । সেকারণেই দুর্বার দুর্গোৎসবের থিম এবার এক যুগ । তবে, চলতি বছর পুজোর প্রত্যেকদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে না । পুজো করবেন যৌনকর্মীরাই । সব নিয়মকানুন মেনেই পুজো হবে । নবমীর দিন প্রসাদও পাঠানো হবে বিভিন্ন জায়গায় । জেলা, কলকাতা মিলিয়ে এবার পাঁচটা পুজো হচ্ছে তাঁদের সংগঠনের । তবে আগামী বছর কলকাতায় আরও একটা পুজো বাড়বে ।' এছাড়া আর জি করের ঘটনা-সহ দেশে যেভাবে নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তারও নিন্দা করেছেন করেছেন তিনি ।
২০১৩ সালে প্রথম বার পুজো হয় । কিন্তু, অনুমতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশে পুজোর আয়োজন হয় একটি ছোট ঘরে। পরের বছরও একই সমস্যা । ২০১৫ সালেও পুজোয় বাধা আসে । সেইসময় প্রতিবাদে উৎসবে অংশ নেয়নি সোনাগাছি । পরের বছর আবারও প্রশাসনিক বাধা । শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে সোনাগাছিতে দুর্বারের অফিসবাড়ির কাছে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের উপরে দুর্গাপুজো করার অনুমতি পান তাঁরা ।