রাজ্যে আরজি কর-কাণ্ডের অনেক আগেই এবার পুজোর অনুদান ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে হাজির থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যের ৪২ হাজার ক্লাবগুলিকে পুজোর অনুদান হিসাবে এবার ৮৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এক লাফে অনুদান ১৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু ৯ অগাস্টের ঘটনার পর পরিস্থিতির খানিকটা পরিবর্তন হয়। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদের জেরে অনেক ক্লাবই পুজোর অনুদান নিতে অস্বীকার করেছিল। সেখানেও সংযত দেখিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। গত ৯ সেপ্টেম্বর নবান্নে তিনি জানান, পুজোর সরকারি অনুদান যাঁরা নিতে চাইছেন না, তাঁদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের কাছে দ্বিতীয় তালিকা রয়েছে।
আরজি করের প্রতিবাদে ঠিক কতগুলি ক্লাব অনুদান নিতে পাকাপাকি ভাবে অস্বীকার করল ? রাজ্য পুলিশের দেওয়া একটি তথ্যে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের ৪২ হাজার ক্লাবের মধ্যে সরকারি অনুদান নেয়নি মাত্র ৫৯টি পুজো কমিটি। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাতে কী কোনও প্রভাব পড়ল ?
বিশ্লেষকদের দাবি, এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট রাজ্যের পুজোর অনুদান নিয়ে যে প্রকল্প, তাতে কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ, ইতিমধ্যে ৪০ হাজারের বেশি ক্লাব সরকারি চেক পেয়ে গিয়েছে। বাকিরাও শনিবার তা পেয়ে যাবে। রাজ্যের ২০টি পুলিশ জেলা থেকে সরকারি সাহায্য ফেরতের কোনও দাবি ওঠেনি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিধান নগর পুলিশ জেলা থেকে পরিসংখ্যান বলছে সবচেয়ে বেশি ক্লাব সরকারি এই অনুদানে না জানিয়েছে। ৫৯টির মধ্যে ২৫টি ক্লাব রয়েছে এই পুলিশ জেলা থেকে, যারা এবার সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছে।
জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পূর্ব মেদিনীপুরে। এই জেলা থেকে সরকারি অনুদান নিয়েছে ১৩০০ বেশি ক্লাব। টাকা নেয়নি মাত্র চারটি পুজো কমিটি। তবে এবার পূর্ব বর্ধমান থেকে সবচেয়ে বেশি ক্লাব সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছিল।
এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই ঘটনা থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট। এক, আরজি করের প্রতিবাদের প্রভাব কলকাতাকে উত্তাল করলেও, গ্রামে তার প্রভাব যে ছিল না, তা পুজোর অনুদান নেওয়ার ঘটনায় শাসক তৃণমূলকে আপাতত স্বস্তি দিল। আর দুই, প্রতিবাদের সঙ্গে পুজোর উৎসবকে গুলিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, তা কার্যত ধাক্কা খেল।