নির্যাতিতার রক্ত, হবে না ব্যর্থ। এবার এই স্লোগান উঠল আলিপুরের বিশেষ আদালতে। যেখানে বেনজির ভাবে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন আদালতের মহিলা আইনজীবীরা। এদিন এজলাসে সন্দীপের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি তোলেন তাঁরা। বিচারক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় এই মামলায় অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ-সহ চারজনকে আদালত থেকে বার করা হয়। এরমধ্যে এক ব্যক্তিকে দেখা যায় সন্দীপকে লক্ষ্য করে পুলিশের গাড়ির দিকে ছুটে যেতে। তাঁর হাতে ছিল জুতো। পুলিশের গাড়ির গায়ে সেই জুতো দিয়ে মারেন ওই ব্যক্তি।
তবে, এদিন আরজি কর দুর্নীতি মামলায় সন্দীপকে নিজেদের হেফাজতেই চাইল না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যার জেরে নিজাম প্যালেস থেকে এবার প্রেসিডেন্সি জেলে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। মঙ্গলবার আরজি কর দুর্নীতি মামলায় আলিপুরের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল এই ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দীপ-সহ চার জনকে। সিবিআইয়ের এই সিদ্ধান্তে কার্যত ক্ষুব্ধ ডাক্তারদের সংগঠন। তাদের নেতা সজল ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্তে সিবিআইয়ের আরও গতি আনা উচিত, কারণ এই তদন্তে অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে, মূল অভিযুক্ত এখনও গ্রেফতার হয়নি, সিবিআইয়ে ভূমিকায় এবার ধিক্কার জানাতে হচ্ছে। কেন নিজেদের হেফাজতে আপতত সন্দীপকে নিল না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ?
আলিপুর আদালতে দাঁড়িয়ে কী বললেন সিবিআইয়ের আইনজীবী ?
এদিনের সওয়াল-জবাব পর্বে সিবিআই আইনজীবীর দাবি, সন্দীপ ঘোষের সহযোগী হিসাবে আরও লোকজনের ভূমিকা মিলেছে। তদন্তে মোবাইল, হার্ড ডিস্ক মিলেছে, যেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। তাতে সময় লাগবে। সিবিআইয়ের এই যুক্তি শোনার পর কার্যত অবাক হয়ে যান বিচারক। তীব্র ভর্ৎসনা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবীকেই।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর থেকে জানতে চাওয়া হয়, কেন এত বড় মামলায় সন্দীপ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাকাপক্ত প্রমাণ ছাড়াই আদালতে এসেছে সিবিআই ? তার জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, কোনও ভাবেই জেল হেফাজতে যেন সন্দীপকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়া হয়। সাতদিন পর ফের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করবে সিবিআই।
দীর্ঘ ১৮ দিন জিজ্ঞাসাবাদে পর আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি করা মামলায় দুর্নীতি ইস্যুতে গ্রেফতার করা হয়েছিল সন্দীপ ঘোষকে। ওই মামলাতেই সিবিআই গ্রেফতার করেছিল বিপ্লব, সুমন এবং সন্দীপ ঘোষের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী আফসর আলিকে। প্রথমদিন সন্দীপকে আদালতে পেশের সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। সন্দীপের বিরুদ্ধে উঠেছিল চোর স্লোগান। মাথায় পড়েছিল স্লোগান।
বিশৃঙ্খলা এড়াতেই আদালতের কাছে ভার্চুয়াল শুনানির আবেদন করেছিল সিবিআই। সেই আবেদন খারিজ করে আলিপুর আদালত। সেইমতো এদিন আদালতে সশরীরে ওই চার অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করা হয়েছিল। সিবিআইয়ের দাবি, গত কয়েকদিনে সন্দীপের একাধিক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে।
সিবিআইয়ের পাশাপাশি গত কয়েকদিনে সন্দীপের ডেরায় হানা দেন ইডির কর্তারাও। তাঁরাও বেশ কিছু নথি উদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও আরজি কর দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের গ্রেফতারি অনেককেই খুশি করতে পারেনি। এদিন সন্দীপকে নিয়ে সিবিআইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া শহরের মানুষের। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় সন্দীপের পাশে তাঁর স্ত্রী। সংবাদমাধ্যমের কাছে আবেদন, সন্দীপকে অহেতুক ভিলেন বানানোর চেষ্টা করবেন না।