দুটি কেন্দ্র। তার জন্য মজুত ১৩৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই আবহে মঙ্গলবার রাজ্যের আসানসোল এবং বালিগঞ্জে হল উপ-নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, দু-একটি বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন। রাজ্যে তৃতীয় দফায় ক্ষমতা দখল করলেও আসানসোল এখনও অধরা শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। বিধানসভা আসনে জিতলেও , এই কেন্দ্র থেকে জিতে এখনও পর্যন্ত লোকসভায় যায়নি তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি। গত দুটি লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপি তৎকালীন প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি এখন তৃণমূলে। তাই আসানসোলে অগ্নিমিত্র পলকে প্রার্থী করে তাদের দূর্গ অটুট রাখতে চায় গেরুয়া শিবির। উল্টোদিকে, শিল্প শহরের হিন্দি ভোট ব্যাঙ্ককে নিজেদের পালে আনতে চকম দিয়েছে তৃণমূল। প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি প্রাক্তন নেতা শক্রঘ্ন সিনহা। তাই রাজনৈতিক মহলের দাবি, বালিগঞ্জের থেকেও এই উপ-নির্বাচনে আসানসোল ছিল সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া।
তাই এই কেন্দ্র ঘিরেই সব চেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে। বারাবনি, জামুড়িয়া-সহ একাধিক এলাকায় শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে গুন্ডামির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। সকালেই বারাবনির একাধিক বুথে ঘুরে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুথের মধ্যে ঢুকে ভোট করছে রাজ্য পুলিশ। বারাবনির একটি বুথেই রাজ্য পুলিশের এক কর্মীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন অগ্নিমিত্রা। বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনে তৃণমূলও। শাসক দলের তরফে অভিযোগ করা হয়, বহিরাগত নিয়ে ঘুরছেন অগ্নিমিত্রা। এই পরিস্থির মধ্যেই অগ্নিমিত্রার গাড়ি লক্ষ করে হামলার অভিযোগ ওঠে। বিজেপি প্রার্থী অভিযোগ করেন, তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর উপরেও হামলা করা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী ও আসানসোলের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মলয় ঘটক এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
এই চাপান-উতোরের মাঝেই আসানসোলে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ঝাঁজরায় তাঁর গাড়ি আটকে দেন ভোটের দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের কর্তারা। এরপরেই ক্ষুব্ধ জিতেন্দ্রর অভিযোগ, কয়লা, লোহা পাচারকারীদের দিয়ে ভোট করাতেই তাঁর গাড়ি আটকানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। জামুড়িয়াতেই বিজেপির এজেন্টকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে দুর্গাপুরে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে।
আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলের গাড়িতে হামলার পরেই তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, রাজ্য তৃণমূল যে ভোট করতে দেবে না, তার প্রমাণ এদিন ফের পাওয়া গেল। আসানসোলে অগ্নিমিত্রার গাড়ির উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন সুকান্ত। ‘আসানসোলের বারাবনিতে অশান্তির জন্য দায়ী অগ্নিমিত্রা পল নিজেই। তিনি প্রচারের আলোয় আসার জন্য নাটক করছেন।’ বিজেপি প্রার্থীর কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের।
তুলনায় অনেক শান্ত বালিগঞ্জের পরিস্থিতি। সকাল থেকে ভোট দেখতে বেরিয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। বিভিন্ন বুথে ঘোরার পর তাঁকে সাউথ পয়েন্ট স্কুলে আটকানো হয় বলে অভিযোগ। এরমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে ভোট দানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাউথ পয়েন্ট স্কুলেই তৃণমূল কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ। প্রায় গোটা দিন এই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা যায় এই প্রথমবার ভোটে দাঁড়ানো কেয়াকে। এরমধ্যেই লরেটো স্কুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিপিএম প্রার্থী সায়েরা হালিমের অভিযোগ, বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা ভোট দেন তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজ্যের শাসকদল।