আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে এসেছে। বিরাট নেক্সাস থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ লবির দৌরাত্ম্য, প্রভাব বারংবার সামনে আসছে। নির্যাতিতার খুন এবং ধর্ষণ ছাড়াও দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গারদে আরজি করের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ। প্রথম থেকেই এই খবর শোনা যাচ্ছিল, সন্দীপের ভয়ে নাকি বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতেন। নির্যাতিতা এমনই কিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরিণতিই কি পেলেন? এই প্রশ্নও উঠছিল।
সন্দীপ ঘোষের এই প্রতিপত্তি এবং প্রভাবের অংশীদার হিসেবে উঠে আসছে আরও বেশ কিছু নাম। RG কর হাসপাতাল সহ রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে থ্রেট কালচার চালানো হতো বলে অভিযোগ। আর সেই অভিযুক্তের তালিকার শীর্ষে নাম রয়েছে সন্দীপ ঘনিষ্ঠ বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, অভীক দে-দের।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজেও বিস্ফোরক অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আনন্দবাজারের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক ভবনের বেশ কয়েকটি ঘর দখল করে চলত রাতভর পার্টি, মদ্যপান। তিন-চারটি ঘর পাকাপাকিভাবে কব্জায় ছিল সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ অভীক দে ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের। এমনই লিখিত অভিযোগ এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে। প্রশাসনিক ভবনের ওই ঘরগুলিতে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীদের জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে ডেকে আনা হত। তাঁদের দিয়ে খাবার ও মদ পরিবেশ করানো হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই কাজ করতে কেউ বাধা দিলেই ফের থ্রেট কালচারের শিকার হতে হত তাঁদের। পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না, রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করে দেওয়া হবে, এমন নানা হুমকি পেতেন ছাত্রীরা। তদন্ত কমিটির কাছে জমা পড়া অভিযোগে জানা গিয়েছে, মেডিকেল পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর জোর করে কাছে রাখতেন অভীক। সেই নম্বর রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কাছে যেত। এমন কী রাতে তাদের সঙ্গ দিতে সেই শিক্ষানবীশদের ডাক পড়ত বলেও অভিযোগ।
অভীক ছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের আরএমও, এরপর এসএসকেএম থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হন তিনি। আরজি কর কাণ্ডে তাঁর নাম উঠতেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে SSKM থেকে। চার সদস্যের চিকিৎসকদের টিম তৈরি করে তদন্ত চলছে। এই মুহূর্তে অভীকের হস্টেলে ঢোকাতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে এই কালচার চলে আসছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে চিঠির পর চিঠিতে। কলেজের ছাত্রীদের, অভীক ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সরস্বতী পুজোয় ঘুরতে যেতে হবে সঙ্গিনী সেজে এমন নিদানও দেওয়া হত বলে উঠছে অভিযোগ। মর্গ থেকে মৃতদেহের ভিসেরা ও হাড় ৭-১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অভীক বাহিনী পাচার করত, এমন অভিযোগও উঠেছে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর, ২০২১-২২, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল শিক্ষানবীশ ছাত্রীদের অশালীন মেসেজ পাঠানো হত বলে অভিযোগ। পরীক্ষার হলেও ছিল অবাধ গতিবিধি। পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রকাশ্যে বলে দেওয়া হত উত্তর। কারা অনার্স পাবে, সেটাও ঠিক করতেন অভীক দে ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। এই প্রসঙ্গে বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। তাদের যা জানানোর জানাচ্ছি। এর বাইরে কিছু বলা যাবে না।’’