ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র দাপটে লণ্ডভণ্ড অবস্থা ওড়িশার একাধিক এলাকায়। ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১১০ কিমি। আর তার জেরে ওড়িশায় ভাঙল একাধিক গাছ, কাঁচা বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি। কযেকটি গ্রামীণ এলাকায় টেলিকম যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলেও জানা গিয়েছে। যদিও এখনও কোনও হতাহতের খবর নেই।
ইন্ডিয়ান মেটেরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট বা IMD-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে ওড়িশার কেন্দাপাড়া জেলার ভিতরকণিকা এবং ভদ্রক জেলার ধামরা-তে ল্যান্ডফল করে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ । এরপর শুক্রবার শুক্রবার বেলা বাড়ার পর থেকে ওই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তার জেরে ওড়িশার একাধিক এলাকায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এবং ধীরে ধীরে সেটি অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে এগোতে শুরু করে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ-
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র দাপটে ভেঙে পড়েছে প্রচুর গাছ। ভিতরকণিকার সমুদ্র তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর গাছ পড়ে যাওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝড়ের ফলে কয়েকটি বিদ্যুৎ-এর খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তার-ও ছিঁড়ে পড়েছে। তার মধ্যে ইন্টারনেট সংয়োগের তারও রয়েছে। ফলে কয়েকটি এলাকার ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। সেই কারণে তথ্য আদানপ্রদানেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
শুধু গাছ বা বিদ্যুৎ-এর খুঁটি নয়, ঝড়ের প্রভাবে একাধিক কাঁচাবাড়িও ভেঙে গিয়েছে। জল ঢুকে গিয়েছে বহু এলাকায়। উপকূলবর্তী এলাকার অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় সমুদ্র ছিল উত্তাল। সেই কারণে বসতি অঞ্চলে জল ঢুকে গিয়েছে। এর পাশাপাশি টানা বৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণে একাধিক গ্রাম জলের তলায়।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঝড়ের দাপট কিছুটা কমলেই উদ্ধারকার্যে হাত লাগাবেন মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সেই দিকে সর্বপ্রথম নজর দেওয়া হবে। তাঁর দাবি, ঝড়ের জেরে অনেকের আটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে তাঁরা যাতে গন্তব্যে দ্রুত ফিরতে পারেন তার চেষ্টা করা হবে।
পাশাপাশি, ঝড় বিধ্বস্থ এলাকায় আগে থেকেই মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে রাখা হয়েছে। ত্রাণ শিবির এবং সাইক্লোন সেন্টারগুলিতেও প্রয়োজনীয় ওষুধ, ORS এবং ডাক্তাররা থাকবেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যাতে সেখানেই চিকিসা করা হয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিটি ত্রাণ শিবির ও সাইক্লোন সেন্টারে পর্য়াপ্ত খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওড়িশা সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে হতাহতের কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
IMD-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল প্রায় সাড়ে ১০ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ল্যন্ডফল হয়। তারপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় ‘ দানা’ । এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। এরই মধ্যে সকাল ৮টা থেকে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে পরিষেবা চালু করে দেওয়া হয়।