সন্ধে সাতটার ফ্লাইট । লাগেজ ড্রপ, বোর্ডিং পাস সব সেরে সিকিউরিটি চেকিং করে অপেক্ষা করছেন বোর্ডিংয়ের জন্য । হঠাৎ শুনলেন, যে বিমানে আপনি যাবেন, তাতে বোমা রাখা রয়েছে । কিংবা এই খবরটা যদি আসে মাঝ আকাশে থাকাকালীন, তাহলে? শুনে শিউরে উঠলেন ? এখন তো প্রায়শই বিমানে বোমাতঙ্কের খবর সামনে আসছে । রিপোর্ট বলছে, অক্টোবর মাসে গত ১৫ দিনে অন্তত, ৪০০ টি বিমানে বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছে । যার সবগুলিই ভুয়ো । সমাজমাধ্যম থেকেই ভুয়ো বোমাতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ । সম্প্রতি নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অন্তত ৭টি বিমানে ভুয়ো বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছে । এবার এই ঘটনায় নতুন মোড় । ভুয়ো বোমাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে মঙ্গলবার সকালেই নাগপুর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, অভিযুক্তের নাম জগদীশ উকি । মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া এলাকার বাসিন্দা । উকি নাকি একজন লেখকও । সন্ত্রাসবাদের উপর একটি বই লিখেছেন । এর আগে ২০২১ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । হুমকি ইমেলগুলির সঙ্গে লেখকের যোগ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য হাতে আসে তদন্তকারীদের । জানা গিয়েছে, পলাতক ছিলেন উকি । তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে নাগপুর পুলিশ । মঙ্গলবারই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, শুধু উড়ান সংস্থা নয়, বিভিন্ন সরকারি দফতর যেমন প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রীর দফতরেও উকি হুমকি ইমেল পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরবেলাই হঠাৎ কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে সাতটি বিমানে বোমা রাখা রয়েছে । বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি তথ্য ছড়ানো হয়েছিল । দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে । বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাতটি বিমানের মধ্যে পাঁচটি ইন্ডিগো উড়ান সংস্থার ও বাকি দু’টি ভিস্তারার । সমাজমাধ্যমে হুমকি পোস্ট নজরে আসতেই হুলস্থূল পড়ে যায় । সতর্ক করে দেওয়া হয় নিরাপত্তাকর্মীদের ।
তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে বিমানবন্দরের ‘বম্ব থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট কমিটি’। একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয় । বোমার হুমকিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয় । তল্লাশি চালানো হয় বিমানগুলিতেও । কিন্তু কোনও বিমানেই বোমা পাওয়া যায়নি। গত সপ্তাহেই মাঝ আকাশে বিমান হাইজ্যাক ও বিমানে হাইড্রোজেন বোমা রাখার হুমকি দিয়ে ফোন আসে কলকাতা বিমানবন্দরেরই পোর্টালের ল্যান্ডলাইন নম্বরে।
গত দুই সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও হুমকি অভিযোগ সামনে আসছে । রবিবারই যেমন ইন্ডিগো, ভিস্তারা মিলিয়ে বিভিন্ন ভারতীয় উড়ান সংস্থার অন্তত ৫০টি বিমানে ভুয়ো বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছে । তার মধ্যে আকাসা এয়ার উড়ান সংস্থার ১৫টি বিমানে ভুয়ো হুমকি এসেছে । অন্যদিকে, ইন্ডিগোর ১৮টি বিমান এবং ভিস্তারার ১৭টি বিমানেও ভুয়ো হুমকি দেওয়া হয়েছে ।
উড়ানে প্রভাব
বোমাতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনায় বিমান পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে । একাধিক বিমান বাতিল করা হয় । কোনও বিমানের আবার যাত্রাপথ বদল করা হয়েছে । এতে সমস্যায় পড়েন বহু যাত্রীরা ।
কেন্দ্রের পদক্ষেপ
বারবার, ভুয়ো বোমাতঙ্কের খবর ছড়ানোর ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্র । কড়া পদক্ষেপের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কে রামমোহন নাইডু জানিয়েছিলেন, যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে এই বার্তাগুলি আসছে, সেগুলিকে নিষিদ্ধ করার পথে চিন্তা ভাবনা করছে কেন্দ্র। অসামরিক বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত দু’টি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনারও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান মন্ত্রী । ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে কেউ ধরা পড়লে, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি এবং জরিমানারও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী । এছাড়া, ভুয়ো বোমা হামলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে যাদের বিরুদ্ধে, তাদের বিমানে ওঠা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে । খুব শীঘ্রই সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ।