'ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি/রাম-লক্ষ্ণণ বুকে আছে করবি আমার কী!' শীতের রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নির্জন রাস্তা দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে যাওয়ার সময় এই মন্ত্রই সাহস জোগায় মনে । তবু, তার মধ্যেও কখনও মনে হয় হয়তো পিছনেই কেউ আছে, এই বুঝি কর্কশ কণ্ঠে কেউ ডাকবে নাম ধরে কিংবা কোনও কঙ্কালসার হাত এগিয়ে আসবে আপনার দিকে !সবটাই মনের ভয় নাকি সত্যিই তেনারা আছেন আমাদের আশেপাশে ? কিছু প্রশ্নের উত্তর সত্যিই হয় না । শুধু থেকে যায় রহস্য, গহীন অন্ধকারের বুক চেরা কালো ইতিহাস ।
ভারতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে নাকি তেনাদের বসবাস । এমনই এক জায়গা কুলধারা । গুগলে সার্চ করলেই কুলধারা নিয়ে নানারকম তথ্য উঠে আসে । যেখানে বলা হয়েছে,জয়সলমের থেকে প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্রামটি কিন্তু একেবারে জনশূন্য । ঘুরে বেড়ায় প্রেতাত্মারা । রাত হলেই নাকি অদ্ভুত সব আওয়াজ ভেসে আসে । এমনটাই দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । একটা সময় যে গ্রাম মানুষের কোলাহলে মুখর ছিল, প্রাণবন্ত ছিল,আজ সেই ধূ ধূ মরু প্রান্তরে শুধুই ধ্বংসাবশেষ । একটা রাতের মধ্যেই উজার হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্রাম । পরিত্যক্ত, অভিশপ্ত ও ভূতুড়ে । কী হয়েছিল ? সত্যিই কি সেখানে তেনাদের বাস ? কোন রহস্য লুকিয়ে ?
১৮১৫ সাল । সেইসময় থরের বুকে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল কুলধারা । এই গ্রামে এক রাতের মধ্যে কী হয়েছিল, কেন জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল ? এই নিয়ে দুই ধরনের কাহিনি প্রচলিত রয়েছে ।
কুলধারায় এক সময় পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের বাস ছিল । সেখানেই ব্রাহ্মণের এক মেয়ের প্রেমে পড়েন জয়সলমেরের রাজার দেওয়ান সেলিম সিং । তাঁকে মন দিয়ে ফেলেছিলেন ব্রাহ্মণের সেই কন্যাও । সেলিমও ওই ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । তারপরেই গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার শুরু করেন দেওয়ান । সেই অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাতারাতি ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান গ্রামবাসীরা । এমনকী, রাগে ওই ব্রাহ্মণ কন্যাকে খুনও করেন উন্মত্ত জনতা । অনেকে মনে করেন, ওই মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনও রাতে ঘুরে বেড়ায় অভিশপ্ত কুলধারা-য় ।
কুলধারা-কে নিয়ে আরও এক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে । জয়সলমেরের মন্ত্রী সেলিম সিংয়ের কুনজরে পড়েছিলেন ব্রাহ্মণ কন্যা । ওই ব্রাহ্মণ আবার গ্রামের প্রধান ছিলেন । মেয়েকে বাঁচাতে সব ব্রাহ্মণদের নিয়ে রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালান ওই গ্রাম প্রধান । কিন্তু নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি । ওইদিন রাতেই পথেই মারা যান । ব্রাহ্মণরা অভিশাপ দেন, ভবিষ্যতে আর কোনও বসতি গড়ে উঠবে না কুলধারায় । সেই থেকে কুলধারা জনমানবশূন্য । সেদিনের পর আর কেউ সেখানে বসবাস করতে পারেননি । রাত হলেই নানারকম আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় ।
কুলধারা গ্রামটায় গেলে দেখা যাবে, ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ । ঘরের চাল নেই । শুধু ইটের দেওয়াল রয়েছে । সকালে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে । গুঞ্জন রয়েছে, অন্ধকার নামলেই কাদের যেন ফিসফাস আওয়াজ, হঠাৎ ব্যাখ্যাহীন চিৎকার...। সত্যিই কি সেখানে ভূত আছে ?
২০১০ সালে দিল্লির প্যারানরম্যাল সোসাইটির একটি দল কুলধারা গ্রামে এক রাত কাটিয়েছিল । তাঁদের একাধিক ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে । ভূতুড়ে তকমা লেগে যায় কুলধারা গ্রামে । আপনিও ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার সাক্ষ্মী থাকতে চান ? তাহলে জেনে নিন কীভাবে পৌঁছবেন কুলধারা গ্রামে ?
হাওড়া থেকে ট্রেনে জয়পুর । তারপর সেখান থেকে লোকাল ট্রেন বা ভাড়া গাড়িতে জয়সলমের । সেখান থেকে কুলধারা-র দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার । জয়সলমের থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারবেন কুলধারা । তবে রাত কাটানোর জন্য জয়সলমেরে থাকতে হবে । সেখানে প্রচুর হোটেলও রয়েছে ।
জানেন কি রাজস্থানের কুলধারার মতো এ বঙ্গেও এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে জনমানব নেই । জানেন গ্রামটার নাম কী ? বেনাগ্রাম । আসানসোলের প্রত্যন্ত গ্রাম । ওই গ্রামও নাকি রাতরাতি উজাড় হয়ে গিয়েছিল । সেখানেও কি ভূত রয়েছে ? লোকের মুখে ফেরে নানা গল্পকথা ।
২০ বছর আগের ঘটনা । ভূতেদের উৎপাতে নাকি রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান সেখানকার বাসিন্দারা । যদিও, তা গুজব বলে মনে করেন অনেকে । তাঁরা বলেন, ওই গ্রামে নাকি দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব ছিল । এছাড়া, গ্রামে জল, বিদ্যুতেরও সমস্যা রয়েছে । তাই গ্রাম ছেড়ে চলে যান বাসিন্দারা । তবে, ওই গ্রামে নাকি নানারকম অলৌকিক ঘটনাও ঘটেছে । ৩৬৪ দিন ওই গ্রাম অন্ধকারে ঢাকা থাকলেও, লক্ষ্মীপুজোর দিন সেখানে আলো জ্বলে ওঠে । আসলে পুজোর দিন গ্রামের সবাই ফিরে আসে গ্রামে । তবে ওই একটা দিনের জন্য । তবে, সরকারের তরফে গ্রামটি পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ।