১২৭ টি দেশের মধ্যে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ১০৫। পড়শি দেশ বাংলাদেশ, নেপাল-শ্রীলঙ্কার স্থান ভারতের আগে। ক্ষুধা সূচক, ২০২৪ -এর স্কেলে ভারতের ১০৫ নম্বর স্থানকে 'গুরুতর' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপুষ্টি, শিশুমৃত্যুর হার এবং অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক তৈরি করা হয়। কনসার্ন ওয়র্ল্ডওয়াইড নামের এক আইরিশ সংস্থা এবং Welthungerhilfe নামের এক জার্মান সংস্থা এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ভারতের জিএইচআই স্কোর ২৭.৩। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলির তুলনায় এই স্কোর বেশ কম। পাকিস্তান-আফগানিস্থানের মতো দেশগুলির সঙ্গে একই বন্ধনীতে ফেলা হয়েছে ভারতকে। এগিয়ে রয়েছে নেপাল-শ্রীলঙ্কা এমন কী বাংলাদেশ।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের জনসংখ্যার ১৩.৭ % অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। ৫ বছরের কম বয়সি ৩৫.৫ % শিশুর বৃদ্ধি হচ্ছেনা ঠিক মতো, জন্মের পর ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে ১৮.৭ % শিশু। ৫ বছর হওয়ার আগে মৃত্যু হয় ২.৯ % শিশুর। চূড়ান্ত অপুষ্টি, অস্বাথ্যকর পরিবেশের মতো নানা কারণের ফলাফল ভয়াবহ এই পরিসংখ্যান।
খাদ্য সূচকে শ্রীলঙ্কার স্থান ৫৬, নেপালের স্থান ৬৮ এবং বাংলাদেশের স্থান ৮৪। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সম্প্রতি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের স্থান যথাক্রমে ১০৯ এবং ১১৬। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বেলারুশ, চীন, কোস্টারিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, হাঙ্গেরির মতো দেশগুলি।২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে ক্ষুধা মুছে ফেলার (Zero Hunger) লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এবারের রিপোর্টে।
২০০০সালের নিরিখে তুলনা করলে দেখা যাবে, শিশু ম্রিত্যুর হার কমলেও শিশু অপুষ্টির সমস্যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ১২৭ টি দেশের মধ্যে ক্ষুধা সূচকের নিরিখে ৪২ টি দেশ হয় 'গুরুতর' অথবা 'আশঙ্কাজনক' তকমা পেয়েছে। ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর রিপোর্ট বলছে খিদের সঙ্গে লিঙ্গসাম্য এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের সরাসরি যোগ রয়েছে।
বৈষম্যমূলক সমাজ এবং লিঙ্গভিত্তিক হিংসা নারী এবং প্রান্তিক যৌনতার মানুষের ক্ষুধা সংকট এবং অপুষ্টি ক্রমশ বাড়িয়ে তোলে, উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ক্রমশ লড়াই করা এঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে।
২০২১ সালে বিশ্বের ১১৬টি দেশের মধ্যে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারতের স্থান ছিল ১০১। ২০২০ সালে ভারত ছিল এই তালিকার ৯৪ নম্বরে। ২০২২ সালে ভারতের স্থান ১০৭। ২০২৩ সালে ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান পড়ে হয়েছিল ১১১।
প্রতি বছর এইডস, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মাতে যত মানুষ মারা যান, তার থেকে বেশি মানুষ মারা যান না-খেতে পেয়ে। ক্ষুধায়। কোভিডের ফলে বহু দেশের খাদ্যের যোগানেই টান পড়েছে বিপুলভাবে। রোজ রাতে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ পেটে খিদে নিয়েই ঘুমোতে যান। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর পরিসংখ্যান থেকে বছরখানেক আগেই বেরিয়ে এসেছিল এই ভয়ঙ্কর ছবি। অতিমারির দুটো বছর গোটা দুনিয়াকেই দাঁড় করিয়েছে প্রবল ক্ষুধার সামনে- ২০১৯ সালে, অতিমারির আগে, গোটা দুনিয়ায় সাড়ে তেরো কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার তীব্র অভাবে ভুগতেন; বর্তমানে সংখ্যাটি তার প্রায় কয়েক গুণ।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এই বিপুল ক্ষুধার নেপথ্যে চারটি জরুরি কারণ তুলে ধরেছিল- ১) যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অশান্তি, ২) বিশ্ব উষ্ণায়ন ৩) কোভিড ৪) খাদ্যপণ্যের বর্ধিত মূল্য।