আমাদের বাঙালিদের প্রিয় ছবির তালিকায় সত্যজিতের সিনেমা থাকবে না, তা হয় না। শুধু বাঙালি কেন, ভারতীয় ছবি নিয়ে আগ্রহ থাকলে মাস্ট ওয়াচের তালিকা সত্যজিৎ ছাড়া ভাবাই যায় না। এসব নিয়ে একটু চর্চা করতে গেলেই জানতে ইচ্ছে করে, সত্যজিৎ নিজে কোন ধরনের ছবি দেখতে পছন্দ করতেন। পরিচালকের নিজের লেখা থেকেই জানা যায় বিশ্ব ছবির প্রতি তাঁর অমোঘ টান ছিল। বেশ কিছু বিদেশি ছবিই পাল্টে দিয়েছিল সত্যজিতের জীবন।
আজ সেরকমই ক'টি ছবির কথা রইল।
বাইসাইকেল থিভস (১৯৪৮)
ভিত্তোরিও দি সিকার এই ছবি থেকেই নাকি সত্যজিৎ তাঁর প্রথম ছবি পথের পাঁচালীর অনুপ্রেরণা পান। মাস ছয়েক লন্ডনে থাকাকালীন এই ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি। বৃষ্টির মধ্যে শুটিং সম্ভব, অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নেই, এমন মানুষদের দিয়েও অভিনয় সম্ভব, মেক আপ ছাড়াও সম্ভব, এইসব সত্যজিৎ বিশ্বাস করতেন, আর বাইসাইকেল থিভস সেই ধারণা আরও দৃঢ় করল।
গোল্ড রাশ (১৯২৫)
চার্লি চ্যাপলিনের এই বিশ্ববিখ্যাত নির্বাক ছবিটি মুগ্ধ করেছিল অস্কারজয়ী বাঙালি পরিচালককে। যে ছবি তাঁর ভাল লাগত, বারবার দেখতেন। গোল্ড রাশের সঙ্গে সত্যজিৎ তুলনা করেছিলেন মোৎজার্টের মিউজিকের।
ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন (১৯২৫)
সারগেই আইজেনস্টাইনের ছবিটি কম করে হলেও অন্তত ২০ বার দেখেছিলেন সত্যজিৎ রায়। দেখতে দেখতে একবার এই সোভিয়েত নির্বাক ক্লাসিকটির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তৈরির কথাও ভেবেছিলেন তিনি।
রাশোমন (১৯৫০)
জাপানি কিংবদন্তি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার সব ছবিই দেখতে ভালোবাসতেন সত্যজিৎ। তবে সবার থেকে আলাদা ছিল রাশোমন। তিনি নিজেই বলেছিলেন, তিন দিন ধরে পরপর তিনবার রাশোমন দেখেন তিনি। সিনেমার প্রতিটা দিকেই পরিচালকের এমন নজর, এমন যত্ন, পৃথিবীর আর কোনো সিনেমাতেই নেই বলে বিশ্বাস করতেন সত্যজিৎ।
দ্য রিভার (ফ্রান্স) (১৯৫১)
জাঁ রেনোয়া, বিখ্যাত ফরাসী পরিচালকের ছবি, ভারতের পটভূমিকাতেই তৈরি। ছবিটি শুধু সত্যজিতের মনের কাছাকাছি, তাই-ই নয়। এই ছবিতে রেনোয়ার সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন সত্যজিৎ।