বঙ্গের রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে দমদম সম্পর্কে বহুল প্রচলিত একটা ঘটনা শোনা যায়। তা হল, রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীকে এই কেন্দ্র ফিরিয়ে দিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আবেদন। সালটা ছিল ২০০৪। ইন্ডিয়া সাইনিং। এই স্লোগানেই পর পর দু বার দিল্লির মসনদে ফেরার স্বপ্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর চোখে। একই স্বপ্ন তখন দমদমে বিজেপি প্রার্থী তপন শিকদারের। বাংলায় প্রথম বিজেপি প্রার্থী যিনি হ্যাটট্রিকের মুখে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, এখান থেকেই দমদমে ম্যাচ ঘোরানোর নায়কের নাম ছিল সুভাষ চক্রবর্তী। যাঁর ম্যাজিকেই হারানো দমদম পুনরুদ্ধার করেছিল বামেরা। সাংসদ অমিতাভ নন্দী।
একটা সময় দমদম ছিল বামেদের মর্যাদার দূর্গ। কারণ, রাজ্যের পালাবদলের আগে পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনায় বামেরা ছিল অপ্রতিরোধ্য। আর এই কেন্দ্রে বামেদের ভোট মেশিনের নাম ছিল সুভাষ চক্রবর্তী। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রে তিনিই ছিলেন বামেদের তারকা। তাঁর সৌজন্যেই তিনবারের সাংসদ বামেদের নির্মল চট্টোপাধ্যায়।
জরুরি অবস্থার ঠিক পরেই হয়েছিল দমদমে প্রথম লোকসভার ভোট। পরিসংখ্যান দাবি করে, আয়তনে সবচেয়ে বড় উত্তর শহরতলির এই লোকসভা কেন্দ্র। যেখানে প্রথম সাংসদ হয়েছিলেন ভারতীয় লোক দলের অশোককৃষ্ণ দত্ত। ১৯৮০ সালের এই কেন্দ্রে বামেদের প্রথম জয়। সাংসদ হন সিটুর প্রাক্তন নেতা নীরেন ঘোষ। রাজনৈতিক মহল দাবি করে, এই কেন্দ্রে চমকের নাম আশুতোষ লাহা। ইন্দিরার মৃত্যুর হাওয়ায় দমদম দখল করে কংগ্রেস।
এরপর দমদমে দীর্ঘ বামেদের শাসন। ১৯৯৮ সালে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটে জয়ে প্রথমবার দমদমে ফুটল পদ্ম ফুল। একবছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার সাংসদ তপন শিকদার। সেই ২০০৪, তপন শিকদারের বিজয় রথ থামিয়ে দমদমে ফিরল বামেরা। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের জন্য।
এ রাজ্যে পালাবদলের আগে অবশ্য পালাবদল ঘটেছিল দমদমে। এক অধ্যাপক হাসি ফোটাল মমতার মুখে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দমদম তৃণমূলের। সৌজন্যে সৌগত রায়। প্রথমবার জিতেছিলেন মাত্র ২০ হাজার ভোটে। পাঁচ বছর আগে মার্জিন ছিল ৫৩ হাজার। রাজনৈতিক মহলের মতে, সাংসদ কোটার টাকায় নিজের কেন্দ্রে কাজ করেছেন সৌগত। আবার বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে বিতর্কও তৈরি করেছেন। আর সেটাই হাতিয়ার করতে চায় বিরোধীরা।
দক্ষিণ থেকে সরিয়ে এবার উত্তরের এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী করেছে সুজন চক্রবর্তীকে। ইতিমধ্যেই দমদম এলাকায় প্রচারে ঝড় তুলেছেন সুজন। সেই ঝড় ভোট বাক্সে পড়বে কীনা, তার অপেক্ষায় বামেরা। কারণ, তাদের হিসাবে যে আসনগুলি তারা জয়ের মতো অবস্থায় রয়েছে, তাতে দমদম অন্যতম। তাই, সুজন চক্রবর্তীর উপরেই তাদের সব বাজি।
পাঁচ বছর আগে এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। সেই কেন্দ্রেই এবার বিজেপির মুখ বারাকপুরের তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা শীলভদ্র দত্ত। রাজনৈতিক মহলের দাবি, সৌগত-সুজনের তুলনায় কম হেভিওয়েট হলেও দমদমে পাসা বদলে দিতে পারেন বর্ষীয়ান শীলভদ্র।
ঘাস-ফুলে ঘেরা দমদম। কিন্তু লোকসভার নির্ঘণ্ট প্রকাশের ঠিক আগে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের অঙ্ক ঘেঁটে দেন বরাহনগরের প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়। জার্সি বদলে তিনি এখন বিজেপিতে। তাঁকে কলকাতা উত্তরের প্রার্থী করছে গেরুয়া শিবির। ফলে দমদম লোকসভার সঙ্গেই উপ-নির্বাচন বরাহনগরে। কার প্রভাব কীসের উপর পড়বে, তা সময় বলবে। তবে দমদম এবার জমজমাট, তা কার্যত বলাই যায়।